ধাতব ধর্ম, অধাতব ধর্ম, পারমাণবিক ব্যাসার্ধ সর্ম্পকে জানুন

৯-১০ শ্রেণির রসায়ন তৃতীয় অধ্যায়

মৌল বা মৌলক পদার্থ

 যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে  ঐ পদার্থ ছাড়া অন্য কোন নতুন পদার্থ পাওয়া যায় না তাকেই বলা হয় মৌলবা মৌলিক পদার্থ। যেমন নাইট্রোজেন, ফসফরাস, কার্বন ,অক্সিজেন, হিলিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার ইত্যাদি। সহজ ভাবে বলতে গেলে বলা যায় পৃথিবীতে মোট ১১৮ টি মৌল রয়েছে এর প্রত্যেকটি হচ্ছে মৌলিক পদার্থ।

যৌগিক পদার্থ

যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে ঐ পদার্থ ছাড়া আরো নতুন কোন পদার্থ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় যৌগিক পদার্থ। যেমন পানি, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন অক্সাইড, কপার সালফেট ইত্যাদি।

প্রতীক

     কোন মৌলের ইংরেজি বা ল্যাট্রিন নামের সংক্ষিপ্ত রূপকেই প্রতীক বলা হয়। যেমন কার্বন এর প্রতীক (c), অ্যান্টিমনি(sb),  ইত্যাদি।

সংকেত

কোন মৌল বা যৌগের অণু সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় সংকেত। যেমন , পানির সংকেত() ক্লোরিনের সংকেত() ইত্যাদি। 
  

ধাতব ধর্ম

যে সকল মৌলগুলো চকচকে আঘাত করলে ধাতব শব্দ করে তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী তাকেই ধাতু বলে। ধাতু ধর্ম ইলেকট্রন ত্যাগ করা। ধাতুর এ ধর্মকে বলা হয় ধাতব ধর্ম। যে যত সহজে ইলেকট্রন ত্যাগ করে তার ধাতব ধর্ম তত বেশি। পর্যায় সারণির যত বাম থেকে ডানে যাওয়া যায় এর ধাতব ধর্ম ততই হ্রাস পায়।

অধাতব ধর্ম

যে সকল মৌলগুলো চকচকে নয় , আঘাত করলে ধাতব শব্দ করে না, তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী না তাকেই অধাতু বলে। অধাতু ধর্ম ইলেকট্রন গ্রহণ করা। অধাতুর এ ধর্মকে বলা হয় অধাতব ধর্ম। যে যত সহজে ইলেকট্রন গ্রহণ করে তার অধাতব ধর্ম তত বেশি। পর্যায় সারণির যত বাম থেকে ডানে যাওয়া যায় এর অধাতব ধর্ম ততই বৃদ্ধি পায়।

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ

পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থান করে নিউক্লিয়াস আর নিউক্লিয়াস থেকে তার বই শক্তি স্তরের মধ্যকার দূরত্ব হচ্ছে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ।
একই পর্যায় সারণির যত বাম থেকে ডানে যাওয়া যায় এদের প্রোটন সংখ্যা বাড়ে এবং তার সাথে সাথে এর ইলেকট্রন সংখ্যা বাড়ে। পরমাণু কেন্দ্রে অবস্থিত নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউটনের সমন্বয়ে গঠিত। কেন্দ্রে অবস্থিত প্রোটন সংখ্যা বাইরের শেষ কক্ষপথে অবস্থিত ইলেকট্রন সংখ্যা গুলো তার নিজের দিকে আকর্ষণ করে। ফলে এদের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ছোট হয়ে যায়। কিন্তু একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচে নামলে এদের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বড় হতে থাকি। কারণ একই গ্রুপের উপর থেকে নিচে নামলে এদের একটি করে শক্তি স্থান যুক্ত হয় ফলে এদের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ আকার বাড়ে। অর্থাৎ একই পর্যায়ে যত বাম থেকে ডানে যাওয়া যায় এদের পারমাণবিক সংখ্যা হ্রাস পায় অন্যদিকে যত উপর থেকে নিচে নামে ততো এদের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়।

আয়নিকরণ শক্তি

গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে ঐ মোলের আয়নিকরণ শক্তি বলে।
আয়নিকরণ শক্তি একটি পযায়বৃত্ত ধর্ম। একই পযায়ের যত বাম থেকে ডানের দিকে যায় পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমতে থাকে। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে আয়নিকরণ শক্তি মান বাড়ে এবং পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে আয়নিকরণ শক্তি মান কমে।
উদাহরণ
Na, Mg, Si, Al  এর মধ্যে Si এর আয়নিকরণ শক্তির মান বেশি। কারণ এই মৌলগুলোর মধ্যে Si এর পারমাণবিক ব্যামার্ধের মান সবচেয়ে কম। পক্ষান্তরে, এই মৌলহগুলোর মধ্যে Na এর পারমাণবিক ব্যামার্ধের মান সবচেয়ে বেশি বলে এদের মধ্যে সোডিয়াম এর আয়নিকরণ শক্তির মান কম।

ইলেকট্রন আসক্তি

গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রনগ্রহণ করে এক মোল ঋনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তি নির্গত হয় তাকে ঐ মোলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে।
ইলেকট্রন আসক্তি একটি পযায়বৃত্ত ধর্ম। একই পযায়ের যত বাম থেকে ডানের দিকে যায় পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমতে থাকে। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে ইলেকট্রন আসক্তি মান বাড়ে এবং পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে ইলেকট্রন আসক্তি মান কমে।
উদাহরণ
Na, Mg, Si, Al  এর মধ্যে Si এর ইলেকট্রন আসক্তি মান বেশি। কারণ এই মৌলগুলোর মধ্যে Si এর পারমাণবিক ব্যামার্ধের মান সবচেয়ে কম। পক্ষান্তরে, এই মৌলহগুলোর মধ্যে Na এর পারমাণবিক ব্যামার্ধের মান সবচেয়ে বেশি বলে এদের মধ্যে সোডিয়াম এর ইলেকট্রন আসক্তি মান কম।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা

দুটি পরমাণু  যখন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অণুতে পরিণত হয় তখন অণুর পরমাণগুলো বন্ধনের ইলেকট্রন দুটিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণকে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।
তড়িৎ ঋণাত্মকতা একটি পযায়বৃত্ত ধর্ম। একই পযায়ের যত বাম থেকে ডানের দিকে যায় পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমতে থাকে। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে তড়িৎ ঋণাত্মকতা মান বাড়ে এবং পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে তড়িৎ ঋণাত্মকতা মান কমে।
উদাহরণ
Na, Mg, Si, Al  এর মধ্যে Si এর  তড়িৎ ঋণাত্মকতা মান বেশি। কারণ এই মৌলগুলোর মধ্যে Si এর পারমাণবিক ব্যামার্ধের মান সবচেয়ে কম। পক্ষান্তরে, এই মৌলহগুলোর মধ্যে Na এর পারমাণবিক ব্যামার্ধের মান সবচেয়ে বেশি বলে এদের মধ্যে সোডিয়াম এর  তড়িৎ ঋণাত্মকতা মান কম।

ক্ষার ধাতু

পযার্য় সারণিতে গ্রুপ -১ এ অবস্থিত মৌলসমূহ যেমন Li, Na, K, Rb, Cs এবং Fr কে ক্ষার ধাতু বলে। এরা প্রত্যেকেই পানির সাথে তকবক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস ও ক্ষার দ্রবণ তৈরি করে। এরা সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে অবস্থিত একমাত্র ইলেকট্রনটি  প্রদান করে আয়নিক যৌগ (লবণ) তৈরি করে।

মৃৎক্ষার ধাতু

গ্রুপ-০২ এ অবস্থিত Be থেকে শুরু করে Ra পযর্ন্ত মৌলসমূহকে মৃঃক্ষার ধাতু বলে। এদের ধর্ম অনেকটা ক্ষার ধাতুর মতোই। এদের অক্সাইডসমূহ পানিতে ক্ষারীয় দ্রবণ তৈরি করে। এরাও সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে অবস্থিত ২টি  ইলেকট্রন  প্রদান করে আয়নিক যৌগ (লবণ) তৈরি করে। এই মৌলসমূহ বিভিন্ন যৌগ হিসেবে মাটিতে থাকে।

অবস্থান্তর মৌল

পযার্য় সারণিতে গ্রুপ -৩ থেকে গ্রুপ- ১১ পযর্ন্ত গ্রুপে অবস্থিত মৌলসমূহ অবস্থান্তর মৌল হিসেবে পরিচিত। অবস্থান্তর মৌলসমূহের নিজস্ব বর্ণ আছে।এরা ধাতব পদার্থ হিসেবে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন প্রদান করে আয়নিক যৌগ তৈরি করে। কোনো পযার্য়ের অবস্থান্তর মৌলসমূহের মধ্যে বাম দিকের মৌল থেকে ডানদিকের মৌল দ্বারা গঠিত যৌগের বৈশিষ্ট্য আয়নিক থেকে সমযোজীতে পরিবর্তিত হয়।

মুদ্রা ধাতু

পযার্য় সারণিতে গ্রুপ-১১ কে অবস্থিত মৌল তামা (Cu), রূপা (Ag), ও সোনা(Au) এদরে ধাতব বৈশিষ্ট্যসহ উজ্জ্বলতা বিদ্যমান। ঐতিহাসিকভাবে এসব ধাতু দ্বারা মুদ্রা তৈরি করে তাদের ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য প্রয়োজনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত করা হয়। এদেরকে মুদ্রা ধাতু বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে এরা অবস্থান্তর মৌল।

হ্যালোজেন 

গ্রুপ-১৭ তে অবস্থিত মৌল F, Cl, Br, I ,At ও Te এই ৬টি মৌলকে একত্রে হ্যালোজেন বলে। হ্যালোজেন শব্দের অর্থ লবণ গঠনকারী। এরা সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে একটি ইলেকট্রন গ্রহণের মাধ্যমে হ্যালাইড আয়ন তেরি করে। হ্যালোজেন সমূহের মূল উৎস সামুদ্রিক লবণ। এরা নিজে নিজেই ইলেকট্রন ভাগাভাগি মাধ্যমে দ্বি-মৌল অণু তৈরি করে।

নিষ্ক্রিয় গ্যাস

পযার্য় সারণিতে গ্রুপ-১৮ তে অবস্থিত মৌলসমূহকে নিস্ক্রিয় মৌল বলে। কারণ এদরে সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকায় এরা ইলেকট্রন আদান-প্রদান বা শেয়ারের মাধ্যমে সাধারণত যৌগ গঠন করে না।


এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url