ইসলামের মৌলিক ইবাদত কয়টি ও কি কি বিস্তারিত জানুন

 আমরা মুসলিম কিন্তু মৌলিক ইবাদত কয়টি ও কি কি এ সম্পর্কে জানি না। আর এই সর্ম্পকে অনেক খোঁজা খুঁজি করছেন। চিন্তার কোন কারণ নেই আজ এই আর্টিকেলটার মূল কথা মৌলিক ইবাদত কয়টি ও কি কি এ সর্ম্পকে। আপনারা যদি মৌলিক ইবাদত কয়টি ও কি কি এ সর্ম্পকে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

প্রিয় পাঠক এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি তার মধ্যে হলো ইবাদতের তাৎপর্য বর্ণনা কর সহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে সেগুলো বিস্তারিত জানতে হলে সর্ম্পূণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

ভূমিকা

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে মজিদে এরশাদ করেন- ‘‘আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে কেবল আমারই এবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।’’ (সূরা আয যারিয়াতঃ ৫৬)
একমাত্র আল্লাহ তালার যাবতীয় আদেশ-নিষেধ হুকুম আহকাম পালন করিয়া চলা এবং তাহার অধিকতর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অতিরিক্ত নেকি কাজ করা কিংবা নফল ইবাদত করায় ইবাদতের ভিতরে গণ্য। এবাদত শব্দের অর্থ বন্দেগী করা, গোলামী করা, দাসত্ব স্বীকার করা। যে সমস্ত নেক কাজ করলে মানবজাতি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি ও তাহার রহমত লাভ করতে পারে তাই ইবাদত।

ইবাদত কি

ইবাদাত হল ইবাদাহ এর বহুবচন। ইবাদত শব্দটি ইসলাম ধর্মের পাঁচটা স্তম্ভের মধ্যেই রয়েছে। একজন মুসলমানের জন্য ইবাদত বন্দেগী করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমস্ত মুসলমানের জন্য ইবাদত বন্দেগী করা বাধ্যতামূলক। ইবাদত শব্দটির মুসলমান প্রায় বলে থাকেন কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ অনেকেই অবগত নয়।

প্রমাণিত হয়েছে যে, ডাক্তার রোগীকে নিরাময় করতে না পারলে বলা হয় ডাক্তার চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে কৃষক জমিতে ভালো ফসল জন্মাতে না পারলে কৃষিকাজে তার ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়। তেমনি মানুষ যদি তার জীবনের উদ্দেশ্য ভালো অর্থাৎ ইবাদত করতে না পারে তবে বলতে হবে যে তার সে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে । সুতরাং আরবী ‘‘আবদ হতে ইবাদাত শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। ইবাদাত শব্দের অর্থ হবে গোলামী করা।

ইসলামের মৌলিক ইবাদত কয়টি ও কি কি

ইবাদাত তিন প্রকার। যথাঃ ইবাদাতের বদনী, ইবাদাতে মালী, ইবাদতে রুহানি। আর প্রত্যেকটির বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল
ইবাদাতে বদনীঃ শরীর কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যে সমস্ত ইবাদত সম্পাদিত হয় তাকে ইবাদাতে বদনী বলে। যেমন নামাজ পড়া, রোজা রাখা, ওযু করা, কষ্ট করিয়া হাঁটিয়া মসজিদের যাওয়া, জামাতের শরীক নামাজ আদায় করা, স্ত্রী- সন্তান হক আদায় করা, ভরণ-পোষণ চালানো, শরীরকে খাটিয়ে রোজগার করা, কষ্ট করে দ্বীনের পথে চলা, ইসলামের দিন কায়েম করা, ইসলামে খেদমতে উপস্থিত হওয়া, দ্বীন ইসলামের ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া ইত্যাদিকে বলা হয় ইবাদাতের বদনী বা শারীরিক ইবাদাত।

ইবাদাতে মালীঃ ইবাদতে মালী অর্থাৎ আর্থিক ইবাদাত। টাকা, পয়সা, ধন- দৌলত দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করাকে বলা হয় ইবাদাতের মালী বা আর্থিক ইবাদাত। যেমন ফেতরা, যাকাত , সদকা ইত্যাদি।

ইবাদাতে রুহানিঃ ইবাদাতে রুহানি অর্থ আত্মার ইবাদত। আত্মার সাহায্যে যে সমস্ত ইবাদত করা হয় তাকে ইবাদত রুহানি বলে ।যেমন আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে মরক্কাবা মশাইদা করা, মনে মনে আল্লাহর নামে জিকির করা,অন্তরে অন্তরে সারা জাহানের সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে জানা ও গবেষণা করা ইত্যাদি। ইবাদতে রুহানি মানে আল্লাহর সৃষ্টি সকল রহস্য বিশ্বাস করা। এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইবাদতের তাৎপর্য বুঝা হচ্ছে ইবাদাতে রুহানি।

ইবাদতের তাৎপর্য বর্ণনা কর

ইবাদাত শব্দটির মুসলমান প্রায় বলে থাকেন। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ অনেকেই জানেনা মানবজাতির জন্ম তার জীবনে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আল্লাহতালার ইবাদত বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয় ।সহজভাবে বলতে গেলে ইবাদত শব্দটি প্রকৃত অর্থ জেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই প্রয়োজন। ইবাদত শব্দটির অর্থ না জানলে মহান উদ্দেশ্যে মানব সৃষ্টি করা হয়েছে তা কিছুতেই লাভ করা যেত না।
যে বস্তুটি তার উদ্দেশ্য লাভ করতে পারে না তা ব্যর্থ ও নিষ্ফল হয়ে থাকে ।যেমন ডাক্তার রোগীর রোগ নিরাময় করতে না পারলে যেমন ডাক্তার ব্যর্থ হয়। ঠিক তেমনি আমরা যদি আমাদের ইবাদত ঠিক করে না করতে পারি তাহলে পরকালে আমাদের ব্যর্থ বলে মনে হবে। 

কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে ইবাদতের জন্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং যে ইবাদত করার আদেশ মানুষকে দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস চেয়ে ইবাদত হল মানুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে চলতে হবে এবং আল্লাহর আইন কানুন মেনে চলতে হবে । আপনার প্রতিটি কাজ প্রত্যেকটি গতি আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে।

পানাহার চলাফেরা কথা-বার্তা, আচার- আচরণ, ইবাদতের শামিল হবে। আল্লাহর কাছে কোনটা জায়েজ কোনটি নাজায়েত কি হালাল কি হারাম কি আদেশ কি নিষেধ কোন কাজ করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয় কোন কাজ করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয় এগুলো বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকাই হচ্ছে ইবাদত ।

একজন মানুষের রুচি ও অর্থ উর্পাজনের জন্য বের হয় সেই পথে হারাম হালাল অনুযায়ী উপার্জন করতে হয় । যদি আপনাদের সামনে হারাম খাদ্য আসে কিন্তু আল্লাহর ভয়ে আপনি গ্গরহণ না করেন , খাদ্য ব্যবস্থা করা এবং আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া, কি অবস্থায় আছে সবকিছু জানাই হচ্ছে ইবাদত। 

কোন ব্যক্তি বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করা ইবাদতের শামীল।কথাবার্তা বলতে আপনি মিথ্যা কুৎসা রটনা অশ্লীল কথা বললে পরের মনে আঘাত দেওয়া ইত্যাদি পরিহার করা ভয়ে সত্য কথা বলা এগুলো সব কিছুই ইবাদতের বলে গণ্য হয় । এই কাজগুলো আপনি যদি করেন তাহলে আল্লাহ পরকালে আপনাকে জান্নাত নসিব দান করবেন ।

আপনার জীবনের প্রথম প্রধান ও বৃহত্তম উদ্দেশ্য যে প্রতিটি মুহূর্তে প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করা সেই বিরাট উদ্দেশ্যে আপনি এসবের মাধ্যমে লাভ করতে পারেন সুতরাং বলা যায় ইবাদতের তাৎপর্য অনেক গুরুত্ব অপরিসীম।

ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য কি

ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো পরকালে শান্তি । অর্থাৎ জান্নাত লাভ করা হচ্ছে ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য। প্রাপ্তবয়স হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলা তার নির্ধারিত বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করার নামই হচ্ছে ইবাদত । এই ইবাদতের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই ইবাদতের জন্য কোন নির্দিষ্ট প্রকাশ রূপ নেই । 

আমরা যদি নামাজ রোজা হজ ও যাকাত ইত্যাদি সঠিকভাবে পালন করি। তাহলে এটা ইবাদতের সামিল আপনার জীবনের প্রধান ও বৃহত্তম উদ্দেশ্য যে প্রতিমুহূর্তে ও যে কোন অবস্থায় আল্লাহর ইবাদা করা, সেই বিরাট উদ্দেশ্য আপনি এসবের মাধ্যমে লাভ করতে পারেন নামাজ আপনাকে দৈনিক পাঁচবার স্মরণ করিয়ে দেই যে তুমি আল্লাহর তাআলার দাসত্ব কর।

রোজা বছরে একবার পরিপূর্ণ ভাবে আল্লাহরবন্দেগী করার জন্য প্রস্তুত করেন। যাকাত আপনাকে বারবার মনে করিয়ে দেই যে তুমি যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছ তা আল্লাহর রাস্তায় দান করো । তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত ব্যয় করা ঠিক নয় যা ইবাদাতের শামিল বলে গণ্য হয় না।

কয়েকটি ইবাদতের নাম

সালাতঃ সালাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। সালাতের মাধ্যমে আমাদের দেহ মন পরিষ্কার থাকে। দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। যা আমাদের মনের ভিতর কে পরিষ্কার রাখেন। শয়তানের উসিলা থেকে মুক্ত করে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাও ইবাদাতের সামিল। কি কাজ করলে আল্লাহ খুশি হন কি কাজ করলে আল্লাহ নারাজ হন প্রতিটি মুহূর্তে খেয়াল করে চলা ইবাদাতের শামিল। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে আমাদের ইসলামের প্রত্যেকটি স্তম্ভ সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে।

আত্মীয়-স্বজনঃ আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় কর ইবাদতের সামিল। আমাদের বাড়ির আশেপাশে যতগুলো আত্মীয়-স্বজন রয়েছে তাদের প্রত্যেক মুহূর্তে খোঁজখবর নেওয়া ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তারা ঠিকমতো খেলো কিনা তারা সঠিকভাবে জীবন যাপন করতে পারছে কিনা এসব কিছুই হচ্ছে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

বাবা-মাঃ ইবাদতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাবা-মা প্রতি হক পালন করা। কারণ আমাদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বাবা-মায়ের হক পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ন। আর বাবা-মায়ের সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে আমাদের ইবাদত গ্রহণযোগ্য বেশি। বাবা মায়ের হক পালন করলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন।

লেখকের মন্তব্য

ইবাদত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা মুসলমান তাই আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করা। আর আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যমে আমাদের এবাদত গ্রহণযোগ্য হয়। জীবনকে পরিপূর্ণ করতে হলে ইবাদত বন্দেগী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবা মায়ের হক আদায় করা, প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া, রোজা করা, নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া সবকিছুই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

আশা করি আপনারা আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে বিস্তারিতভাবে ইবাদত সম্পর্কে জানতে পারবেন। যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগে তবে অবশ্যই অন্যের কাছে শেয়ার করে দিবেন এবং কমেন্ট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url